ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীর সর্বত্রই করোনা বর্জ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
  • ১৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনার কারণে দেশে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে গত ৩০ মে থেকে। এর আগে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে ৫ জুন নির্দেশিকা হালনাগাদ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব বাজার পর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মাস্ক পরা। জীবন বাঁচাতে এর বিকল্পও নেই। এসব সুরক্ষা সামগ্রী তথা কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে রাজধানীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে।

রাজধানীর যত্রতত্র মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড-গাউনসহ যেসব সুরক্ষা সামগ্রী সাধারণ মানুষ ব্যবহার করছেন; এর একটা বড় অংশ রাস্তা-ঘাটে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাতীয় সুরক্ষা সমাগ্রীতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারে।

রাজধানী ঢাকার যখন করোনা বর্জ্যে বেহাল দশা তখন গতকাল চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বন ও পরিবেশ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১২ আগস্ট পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য্য করা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিকা আলী এবং মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এ নিয়ে রিট করেন। সেই আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে রিট আবেদনকারী নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

এর আগে গত ১২ জুলাই এ বিষয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান ওই দুই আইনজীবী। নোটিশে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি-বিধান পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন চাওয়া হয়। রিট আবেদনে পরিবেশ ও বন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক, বন ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক, ঢাকার দুই সিটি মেয়রসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সারাদেশে হাজার হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন ২০ টনের বেশি চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে অন্যান্য বর্জ্যরে মত চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও অস্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশ দূষণ ঘটছে। বিশেষ করে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

রাজধানীতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে গেছে। ঢাকার দুই সিটির বাসাবাড়িতে সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্য। যেগুলোর ব্যবস্থাপনায় আলাদা কোনো উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের। কোনো প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই এগুলো সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং বা ধ্বংসের কাজ করছেন হাজারো পরিচ্ছন্নতা কর্মী। যারা যেকোনো মুহূর্তে সংক্রমিত হতে পারেন।

করোনা সুরক্ষাসামগ্রী প্লাস্টিকের তৈরি যা একবার ব্যবহারযোগ্য। এসব পণ্য ভ‚মিতে বা পানিতে সাড়ে চারশ’ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তাই মাস্ক-প্লাস্টিকে তৈরি অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী ভূমি, নর্দমা, নদী ও সমুদ্র দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। সাধারণ বর্জ্যরে মতো যখন করোনা বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো হয় তখন মারাত্মক বায়ু দূষণ ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিকল্প কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত মাস্ক-অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী মানুষকে ব্যবহার করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাজধানীর সর্বত্রই করোনা বর্জ্য

আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনার কারণে দেশে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে গত ৩০ মে থেকে। এর আগে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে ৫ জুন নির্দেশিকা হালনাগাদ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব বাজার পর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মাস্ক পরা। জীবন বাঁচাতে এর বিকল্পও নেই। এসব সুরক্ষা সামগ্রী তথা কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে রাজধানীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে।

রাজধানীর যত্রতত্র মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড-গাউনসহ যেসব সুরক্ষা সামগ্রী সাধারণ মানুষ ব্যবহার করছেন; এর একটা বড় অংশ রাস্তা-ঘাটে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাতীয় সুরক্ষা সমাগ্রীতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারে।

রাজধানী ঢাকার যখন করোনা বর্জ্যে বেহাল দশা তখন গতকাল চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বন ও পরিবেশ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১২ আগস্ট পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য্য করা হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিকা আলী এবং মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এ নিয়ে রিট করেন। সেই আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে রিট আবেদনকারী নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

এর আগে গত ১২ জুলাই এ বিষয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান ওই দুই আইনজীবী। নোটিশে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি-বিধান পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন চাওয়া হয়। রিট আবেদনে পরিবেশ ও বন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক, বন ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক, ঢাকার দুই সিটি মেয়রসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সারাদেশে হাজার হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন ২০ টনের বেশি চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে অন্যান্য বর্জ্যরে মত চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও অস্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশ দূষণ ঘটছে। বিশেষ করে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

রাজধানীতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে গেছে। ঢাকার দুই সিটির বাসাবাড়িতে সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বর্জ্য। যেগুলোর ব্যবস্থাপনায় আলাদা কোনো উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের। কোনো প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই এগুলো সংগ্রহ, পরিবহন, ডাম্পিং বা ধ্বংসের কাজ করছেন হাজারো পরিচ্ছন্নতা কর্মী। যারা যেকোনো মুহূর্তে সংক্রমিত হতে পারেন।

করোনা সুরক্ষাসামগ্রী প্লাস্টিকের তৈরি যা একবার ব্যবহারযোগ্য। এসব পণ্য ভ‚মিতে বা পানিতে সাড়ে চারশ’ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তাই মাস্ক-প্লাস্টিকে তৈরি অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী ভূমি, নর্দমা, নদী ও সমুদ্র দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। সাধারণ বর্জ্যরে মতো যখন করোনা বর্জ্য উন্মুক্তভাবে পোড়ানো হয় তখন মারাত্মক বায়ু দূষণ ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিকল্প কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত মাস্ক-অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী মানুষকে ব্যবহার করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কি পদক্ষেপ নেয়া হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।